, রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫ , ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পথে বাংলাদেশ: ইভি উৎপাদনে সরকারি নীতিতে নতুন মাত্রা

  • আপলোড সময় : ১১-০৬-২০২৫ ১১:৩৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১১-০৬-২০২৫ ১১:৪৮:৫৪ পূর্বাহ্ন
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির পথে বাংলাদেশ: ইভি উৎপাদনে সরকারি নীতিতে নতুন মাত্রা প্রতীকী ছবি
বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিনির্ভর পরিবহন ব্যবস্থা ও ব্যাটারি শিল্পের বিকাশে সম্প্রতি শুরু হয়েছে এক নতুন যুগ। অন্তর্বর্তী সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে দেশে ইলেকট্রিক যানবাহন (ইভি) এবং লিথিয়াম-গ্রাফিন ব্যাটারি উৎপাদনে তৈরি হয়েছে অনুকূল পরিবেশ। দুইটি পৃথক এসআরও জারির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার কমিয়ে আনা হয়েছে মাত্র ১ শতাংশে। এর মাধ্যমে দেশীয় শিল্পে যেমন গতি আসবে, তেমনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বেড়ে গেছে বহুগুণ। মঙ্গলবার ১০ জুন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যমন্ত্রণালয়।



শুল্ক হ্রাসের ফলে ইলেকট্রিক বাইক, ত্রিচক্র ও চতুরচক্র যানবাহনের ব্যাটারি উৎপাদন এখন স্থানীয়ভাবে সম্ভব। আগে এসব কাঁচামালের আমদানিতে শুল্কহার ছিল ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত। নতুন হারে ১ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করায় উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে, যার সুফল মিলবে সরাসরি ভোক্তা পর্যায়েও।


​​​​ এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরপরই প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন যৌথভাবে চন্দ্রায় একটি আধুনিক লিথিয়াম ব্যাটারি কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাথমিকভাবে বছরে প্রায় ৮০ হাজার ব্যাটারি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটাও বাংলাদেশে তাদের বৈদ্যুতিক যানবাহন প্রকল্প নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।


​​​​​লিথিয়াম-আয়ন ও লিথিয়াম-গ্রাফিন ব্যাটারি ব্যবহারে কার্বন নিঃসরণ প্রায় ৫০% পর্যন্ত হ্রাস পায়। তাছাড়া এগুলো তুলনামূলকভাবে হালকা, দীর্ঘস্থায়ী এবং পুনরায় চার্জ দেওয়া যায় সহজে। বর্তমানে অধিকাংশ ইজি বাইক ও রিকশা এখনও অ্যাসিড-ব্যাটারির উপর নির্ভরশীল, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। নতুন নীতিমালায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারে এই পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন আশা করা হচ্ছে।


পুরাতন ও রিফার্বিশড যন্ত্রাংশ আমদানির নামে রাজস্ব ফাঁকি ও ই-বর্জ্যের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালের এসআরও নম্বর ১২৩ বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ১,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই নীতিগত সংস্কারে নেতৃত্ব দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তার প্রস্তাবনার ভিত্তিতে এনবিআরের চেয়ারম্যান, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের সচিব এবং বাণিজ্য সচিব সম্মিলিতভাবে প্রস্তাবটি বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ও প্রস্তাবকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অনুমোদন দেয়।


এই উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশে ইভি শিল্পে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিভিন্ন কারখানা ও প্রযুক্তি খাতে দক্ষ মানবসম্পদের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। একইসাথে, স্থানীয় উৎপাদনের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার উপর নির্ভরতা কমবে এবং রপ্তানি বৈচিত্র্য অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে।



​​​​বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের শিল্পনীতিতে এক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। এটি শুধু প্রযুক্তিনির্ভর পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের পথই তৈরি করছে না, বরং সবুজ অর্থনীতির দিকে জাতিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিচ্ছে। ‘সবুজ বাংলাদেশ’ গঠনে এই উদ্যোগ একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে দেবে বলেই ধারণা বিশ্লেষকদের।

নিউজটি আপডেট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
​‘এনবিআর সংস্কার’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বার্তা

​‘এনবিআর সংস্কার’ বিরোধী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর বার্তা